top of page

হরিণ ! হরিণ !

একটা ঘরে দুজন থাকি
আমরা দুজন রাগ করে
দরজা দেরাজ জানলা কপাট
সমান নিলাম ভাগ করে
কোনো একজন বাইরে গেলে
লাগাই তালা ঠিক করে
একটা কপাট বন্ধ থাকে
অন্য কপাট ফাঁক করে।

এই আমাদের সম্পর্ক । আমাদের মধ্যে কথা নেই । ব্যাথা আছে । ওর খাট আর আমার খাট পাশাপাশি। ও যখন জেগে থাকে, তখন ওর কথা শুনি না । ও যখন ঘুমোয়, তখন ওর কথা শুনি । বেশি বেশি শুনি। ও ঘুমের মধ্যে কথা বলে ।

আমার সারাদিন পরিশ্রম । বারো-চোদ্দো-ষোলো ঘন্টা । রাত্রে ঘুমোতে চাই । কিন্তু পারি না । পাশের খাট থেকে মধ্যরাতে ও চেঁচায় হরিণ ! হরিণ !

ও চেঁচায় - আহা তাজমহল !

ও চেঁচায় - দেখো কী সুন্দর ঝরনা !

ও চেঁচায় - পেরেছি ! পেরেছি !

আমি ওকে অনেক বার বলেছি স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো । আমাকে ঘুমোতে দাও । ও কিছুতেই শোনে না ।
রোজ রাতে চেঁচায়ে হরিণ, হরিণ ... !

গতকাল মাঝ রাত্রে হরিণ! হরিণ! শুনে আমি আর নিজেকে সংযত করতে পারলাম না । ওর বুকের উপর বসে গলা টিপে ধরলাম । অনেকক্ষন । ওর জিভ বেরিয়ে পড়ল, শরীর নেতিয়ে পড়ল । আমি নাকের কাছে হাত রেখে দেখলাম নিশ্বাস নেই । তারপর ঘুমোলাম ।

সকালে দাঁত মেজে কাজে বেরুলাম । সারাদিন কাজ । ফেরার সময় মনে হল আমার ঘরে একটা মৃতদেহ আছে । নিশ্চই এতক্ষনে পচতে শুরু করেছে । দুর্গন্ধ বেরোবে । এর মধ্যে ঘুমোব কী করে ? তারপর কাল কী হবে ? আরও দুর্গন্ধ । পরশু ? পাড়ার লোক আসবে, পুলিশ ... মৃতদেহ কোথায় সরাব?

ঘরে ফিরি । একটা কপাট খোলা । ঘরে ঢুকি । দুর্গন্ধ পাচ্ছি না । লোকটা শুয়ে আছে । ঠোঁট নড়ছে । বিড়বিড় করছে - হরিণ ! হরিণ !

ফাঁস

অতনুর ছেলেটা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে । এবারই ভরতি হল । বয়স মাত্র চার । পিঠে ব্যাগ, কাঁধে ওয়াটার বটল । ছেলেটা এখনও ওয়াটার বটল বলতে পারে না, বলে আতল-বাতল । অতনু খবরের কাগজে চাকরি করে । ডেস্কে । অতনুর বউ অফিসে চাকরি করে । সকাল ন’টায় বেরিয়ে যায় । অতনু ছেলেকে তৈরি করে । খাওয়ায়, জামা-প্যান্ট পরায়ে, স্কুল ব্যাগ গুছিয়ে দেয়, স্কুল বাসে তুলে দিয়ে বাই-বাই করে ।

অতনু টাই পরাতে পারে  না । ও নিজে জীবনে টাই পরেনি । ওর যা চাকরি, তাতে টাই পরতে হয় না । ছেলের টাইটাও অতনুকে পরাতে হয় না । টাইটা তৈরিই থাকে । গিঁট দেওয়া অবস্থায় আলনায় ঝোলানো থাকে । অতনু শুধু মালার মতো ছেলের গলায় পরিয়ে গিঁটটা একটু টাইট করে দেয় । একটু ভুল লিখলাম । টাইয়ের গিঁটকে গিঁট বলতে নেই, নট বলতে হয় । আজ টাইটা নট বাঁধা অবস্থায় নেই । বউ ওটা কেচে দিয়েছিল । সেইটা পরাতে গিয়ে আটকে গেছে । এবার খুলতে পারছে না অতনু । যত খোলার চেষ্টা করছে, ততই আটকে যাচ্ছে । ছেলে হাঁসফাঁস করছে । ক্রমশ টাইট হয়ে যাচ্ছে ফাঁস ।

চাবির সরু পথ

ছোটোরা চাবির গর্তে চোখ রেখে বড়ো হয় । আমিও । মায়ামাসি একা থাকত । একটা লোক মাঝে মাঝে ঘরে ঢুকত । চাবির গর্তে চোখ রাখতাম । গরমের দুপুরে মায়ামাসি আদুর গায়ে ঘুমোত । একদিন গরমের দুপুরে চাবির সরু পথে চোখ রেখে দেখলাম মায়ামাসি ঝুলছে ।

প্রেম

ও আমাকে অনেকবার বলেছিল এভাবে দুপুরবেলায় চোরের মতো এসো না ।

তবু যাই ।

আজ গেলাম ।

বলল কেন এলে ?

বললাম তেষ্টা পেয়েছে । একটু জল খেয়েই চলে যাব ।

ও বলল খেয়েছ দুপুরে ?

বললাম না । খাওয়া হয়নি ।

ও বলল ভাত নেই । শশা আর পেয়ারা আছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে বিদেয় হও ।

ও আমাকে কাটা ফল দিয়েছিল । তাতে রক্ত লেগে ছিল ।

ঘৃণা

---একী ? কী সর্বনাশ ! কী হল ?জামাকাপড়ে এত রক্ত ?

---আমার না ।

---কার ?

---যাকে মেরেছি ।

---এক্ষুনি খুলে ফেল । ধুয়ে ফেলতে হবে ।

আমার বউ কুয়োতলায় আছাড় মারছে ।
এত জোরে কেন ? আমার লাগছে ।

bottom of page